স্বপ্নের ভেতরে
আঠেরো ঘন্টা ট্রেন দেরিতে চলছে
নিজের সন্ধান পেতে
চাইনি স্থিরভাবে।শুধু একটার পর একটা দ্বীপ কুয়াশার ভেতর দিয়ে নৌকা বেয়ে এসে
এক বিরাট আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম।আয়নায় দেখেছি শুধুই
ভাসমান নৌকাটি।তার ভেতর একটা মস্ত ছিদ্র দিয়ে হু হু করে জল ঢুকছে নৌকাটির ভেতর।জানি না ডুবন্ত নৌকাটিকে কীভাবে রক্ষা করবো আমি।
এমন একটা সময় থেকে
আচমকা পলক ফেলে চলে যেতে পারি বাথরুমের আলো নিভিয়ে দেওয়া শূন্যতার ওপারে।রান্নার প্রবল ঝাঁঝ বাথরুমের দরজার ফাঁক দিয়ে এসে আমার শরীরে লাগছে।এই মুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে কুয়াশা।এই কুয়াশাকে আমি
বুকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে মফস্বলের একটা ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম।
কুয়াশা এখানে ভালোবাসার
নাম।যে ভালোবাসা আমাদের বাড়ি থেকে মেয়েদের ইশকুল পার করে যাওয়া
দীঘিটিকে ভোরের কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে।সবুজ এক দৃশ্যের
ভেতর আমি দেখি জল ও কুয়াশার আশ্চর্য রমনসুখ।অথচ ধীরে ধীরে
রোদ এসে নিভিয়ে দেয় কুয়াশা।
ভালোবাসা এক পুরোনো
অসুখের মতো ধীরে ধীরে চলে যায় আকাশের পথ দিয়ে।
আরেকটা পলক ফেলি।দেখি,
দীর্ঘদিন ছেড়ে এসেছি যাকে তার কুয়াশামাখা বাড়ির পথে আমি।হলুদ হ্যালোজেনের আলো জাদুর জগতে নিয়ে গেছে কুকুরের শরীরগুচ্ছকে।তাদের পাশ থেকে চলে গেছে বিচ্ছেদের পথ তবু কুয়াশা কাটেনি।
কুয়াশা কাটে না
আমাদের এই মফসস্বলে।সারাদিন শহরে নিজেকে নিজের চোখের সামনে ছোট হতে দেখা মানুষ
যখন বাড়ি ফেরার পথে রাতের অন্ধকারে রেললাইনের ধারে কাশগুচ্ছের মতো কুয়াশা ফুটে থাকা
দেখে তখন সে মনে মনে ভাবে এক রূপকথার সন্ধান সে জানে।কেবলমাত্র সে ই।
সে পলক ফেলে আর
অমনি চলে যায় সেই গভীর রাতের ট্রেনের শব্দের ভেতর।একটা শব্দ যেন বুকের গভীর থেকে সমস্ত অরণ্য ভেদ করে চলে যাচ্ছে কোথাও।যেন
এক উন্মাদ রমণীর চিৎকার।এক একটা বিচ্ছেদ যন্ত্রণা যেঙ বালকের হাতের কেটে যাওয়া ঘুড়ির
মতো আকাশের কোন ছাদে গিয়ে পড়ছে।যেন এক মুখ সেই
কোন জন্মে ফেলে এসেছিল সে কুয়াশার ভেতরে।
কুয়াশা এখানে বিচ্ছেদ।তাই কুয়াশার ভেতরে থাকে একটা ঘরের সম্ভাবনা।ঘরের একটা বারান্দা।সেখানে ঝোলানো
একটা তৈলচিত্র।তৈলচিত্র জীবন।যাকে দেখা যায়
অথচ ছোঁয়া যায় না,গন্ধ নেওয়া যায় না,হারিয়ে যাওয়া যায় না সেই তৈলচিত্রের
ভেতরে।অথচ তার ভেতরে কেমন আশ্চর্য এখনও জমে আছে অল্প অল্প কুয়াশা।
কুয়াশা এখানে সময়।যার কোন মানে নেই অথচ যে ক্রমাগত বদলে দিতে চাইছে জীবনের মানে।একটি পলক ফেলে পার হয়ে গেলাম আরও একটু সময়।সামনে বা পেছনে নয়,জীবনের আরও একটা বোধের ভেতর।
কুয়াশার ভেতর স্টেশনে
দাঁড়িয়ে থাকি।কোনপ্রকার অপেক্ষাই কি বাস্তব?কোনপ্রকার অপেক্ষাই কি স্বপ্ন?স্বপ্নের কি নিজস্ব কোন ভালোবাসা?বিচ্ছেদ?অপেক্ষা আছে?একুশ বছর বয়সী মেয়েটি যে আচমকা জীবনকে
অসম্ভব বিশ্বাসঘাতক জেনেছিল তার শরীরের মতো স্টেশনে শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকি।একটি ট্রেন এসে নিয়ে যাবে আমাকে অন্তিম স্টেশনে।
অন্তিম স্টেশনের
নাম ক্ষমা।কুয়াশার ভেতর চোখের দেখার ক্ষমতার সাথে লড়াই করে অপেক্ষায়
থাকি কখন আসবে সেই দূরপাল্লার ট্রেন।
তখন পাশে দাঁড়িয়ে
থাকে কালো আলখাল্লা গায়ে লোকটি।
শীতল ঠোঁট কানের সামনে নিয়ে
এসে জানায় কুয়াশার কারণে ট্রেন আঠেরো ঘন্টা দেরিতে চলছে।
ভালো লাগলো
ReplyDelete🌸
Deleteঅসম্ভব ভালো। এমন লেখাই তো পরতে চাই যা আয়না হয়ে উঠবে।
ReplyDeleteআমাদের যাত্রাপথ বারুদ ও পরীর গন্ধমাখা হোক।
Delete"অন্তিম স্টেশনের নাম ক্ষমা"... আহা! ❤
ReplyDelete😊
Deleteআলাদা করে এই লেখা নিয়ে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই। বারবার যা বলি, এবারও তাই বলবো। আপনার প্রতিটা লেখাই আশ্রয়ের মতো। যে আশ্রয়
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deleteস্নিগ্ধ হয়েছে। মনের আরাম🌼
ReplyDelete🌸
Deleteএরকম রূপকথায় মাখা গল্প পড়লে জীবনবোধটা চোখের সামনে ধরা দেয় আমার। ধন্যবাদ লেখার জন্য। 🍃
ReplyDelete🌸
ReplyDelete🤗
কুয়াশার যে দ্বীপে আশ্রয় নিতে ইচ্ছে কতে, তার অন্যতম বেঁচে থাকার রসদ এই লেখাটি হতে পারে। অনেক ধন্যবাদ এটি লেখার জন্য...
ReplyDelete🌸
Deleteভালো লাগল!
ReplyDelete🌸
Delete