পাকদন্ডী
এই যে ঘুমের শেষে
পরিপূর্ণ না জেগে, বোজা চোখেই আধো কুয়াশা ঘেরা একটা ঝুলবারান্দায় হালকা
পায়ে হেঁটে বেড়ানো, এর নাম আমরা দিয়েছি শীতকাল। পায়ের ওপর আলতো করে টেনে
নিয়েছি চাদরটা আরো ওম পাবো বলে। ঘুমের শেষ স্বপ্নটা থেকে বেরিয়ে এসেছি মিনিট তিনেক
কিন্তু জাগরণ এখনো চোখের দরজার বাইরে অপেক্ষায়। এখন সময় বড় নিজস্ব, পোষা
কুকুরের মতো ! নিভৃতে কুন্ডলি
পাকিয়ে একলা বসে। শুয়ে শুয়েই বেশ বুঝতে পারছি জানলার পর্দার বাইরে ঝুপঝুপ করে ঝরে
পড়ছে রাতভর অসময়ের বৃষ্টি। কাঁচের নীলচে শার্সির ভাঙা ফাঁক দিয়ে সন্তর্পণে ঘরে
ঢুকছে শীতের নীলচে সাদা নাকি সবুজ কুন্ডলি পাকানো ভিজে মফস্বলের স্যাঁতস্যাঁতে
সকাল এবং ছ্যাঁকছ্যাকে জলছাপে ভিজে গোড়ালি অবধি ঢেকে নিচ্ছি আমি পাহাড়িয়া
জলদাবাড়ির স্মৃতিতে। ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরে শুলেই হাতছানি দিচ্ছে জলপাই অরণ্য। আমি
কি নাথুলা নাকি সুনতালিখোলা্য? সঙ্গে
ওরা কারা? তিনজন নবীন যুবক! কতদিন ওরকম
সনতারিখের হিসেব না করে পার হইনি মেঘেদের পাড়া, সেতু, জনপদ। কুয়াশার পাকদন্ডী কেটে কেটে হলুদ পাতার পথ ধরে ওরা মিলিয়ে
যাচ্ছে ভেঙে পড়া মনেস্ট্রির দিকে। ওদের গলা ছেড়ে এতোলবেতোল গান পাইনের চিরুন চিরুন
পাতায় ফালি ফালি হয়ে কেটে তীক্ষ্ণ শিসের মতো ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়। ভারী মোজা ভেদ করে
চুয়িয়ে ঢুকছে বরফ ছেঁচা জল। মুখ নিচু করে দেখি, কুলকুল
করে গোড়ালি ডোবা জল বয়ে যাচ্ছে নরম মখমলি শ্যাওলার পোশাক পড়া অনাদি অনন্তকালের
পাথরের ফাঁক ধরে ধরে। ওখানে নরম ভোর, বৃষ্টির এ পাথর থেকে ও পাথর জোড়া
ঝুলন্ত নড়বড়ে সাঁকো। অবিকল সিনেমার মতো, পায়ে পায়ে নেমে যাচ্ছে ওয়াদি, এখানে
ওখানে ছবির মতো কাঠের কুঠুরীবাড়ি থেকে উড়ে যাচ্ছে নায়িকার সাদা শিফন শাড়ির মতো
আকাশমাখা আঁচলের গলগলে ধোঁইয়া। প্যাস্টেল রঙের মতো উজ্জ্বল নীল, হলুদ, সাদা
ছায়াবাড়ি, জানলায়
ফুলছাপ পর্দাদের কুয়াশায় ভিজে যাওয়া আশিয়ানার নিচে কুচোকাঁচা পাহাড়ি ভুটিয়া।
বাদামি মোরগের ডাকে তেরছা আলোর সকাল। আজ আর রোদ্দুর নেই। আজ আর রোদ্দুর উঠবে না।
আজ
শুধু
কুয়াশার
পাকদন্ডী...
No comments:
Post a Comment