সাঁঝবেলার কুয়াশা
সূর্য ডুবে যাওয়ার পর যেমন অন্ধকার আসে।তেমনি প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে একটা অন্ধকার সন্ধ্যা আসে।সেই সন্ধ্যাতে ঘন গাঢ় কুয়াশা থাকে।সারা রাত সেই কুয়াশা সবার সঙ্গে থাকে এবং তা ভোরের হওয়ার সাথে আস্তে-আস্তে বাড়তে বাড়তে নির্দিষ্ট সময়ে মিলিয়ে যায়।অন্ধকারের সময় হাতে থাকে হাত থাকে কুয়াশার হাত।ধরে নেওয়া যায় গাঢ় অন্ধকার ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় একটা মানুষের জীবন।কোন না কোন নির্দিষ্ট কেউ হয়ে থাকে প্রত্যেকটা কুয়াশা।একটা নাম জুড়ে যায় কুয়াশার আগে তা হল সাঁঝবেলার কুয়াশা।
ধরে নাও তুমি সাইকেলে পিচ গলা রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছ।দূরে কোন যানবাহনের হেডলাইট তোমার মুখে পড়ছে ইতিউতি।তোমার পেছনের সওয়ারী হয়তো কানের কাছে বলবে সামলে কিমবা তোমার পিঠে হাত দিয়ে তোমায় সতর্ক করে তোমার কুয়াশা হবে।
রেশনের লাইনে যারা যারা দাঁড়িয়ে থাকে মনে হতে পারে যুদ্ধের বাজারে লঙ্গরখানায় দেওয়া হচ্ছে প্রাণ।আগে তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খাবারের জন্য চলমান লাইন।হঠাৎ যদি লাইন থেকে কেউ তোমার বন্ধু বেরিয়ে হাতটা ধরে এগিয়ে নিয়ে সামনের লাইনে জুড়ে দেয়। হয়তো সেও তোমার কুয়াশা।
তোমার সময়টা ভালো নেই,ছেড়ে চলে গিয়েছে তোমার কাছের অনেক প্রিয়জন।সেই সময় তোমার হাতে যে হাত রেখেছিল সেও তোমার নিস্তব্ধ এক কুয়াশা।
নিঝুম রাত শুরু হবে রাস্তায় তুমি একা।এদিক সেদিক তুমি খুঁজে পাচ্ছো না কাউকে।সেই সময় হঠাৎ কেউ তার গাড়ি থামিয়ে তোমার সাহায্যে অন্ধকারে।সেও এক কুয়াশা হতে পারে।
অনেকগুলো ছোট ছোট বারি বিন্দু যেগুলো প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কখনো এগিয়ে আসে মিশে যাওয়ার মত করে ঘুরতে গিয়ে।
সোনার পাহাড় চূড়ায় উঠবার স্বপ্ন মাথায় নিয়ে ঘুম ভেঙে এগিয়ে গিয়ে পিছন দিকে হঠাৎ তোমার হাত ধরে টানন দেয়।সেও তোমার কুয়াশা হতে পারে।
তোমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে চলার পথ সুগম করার জন্য শিক্ষক মহাশয় তোমাকে বিভিন্ন রকমের কথা উপদেশ দিচ্ছে।তোমার কথাগুলো মনে হতে পারে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।সেও তোমার কুয়াশা।
ভিড় বাসে হঠাৎ কেউ তোমায় সিট ছেড়ে দিল।তুমি ভাবতে পারো তাকেও কুয়াশা।বাসের কাউকে চেনো না তুমি।সবাই অচেনা।সেই অচেনার ভিড়ে তুমি ভাবতে পারো তোমার সেই কুয়াশা।কুয়াশা নিজের কাছে গড়া এক অন্ধকার।
অনেকটা দূরে অন্ধকার পেরিয়ে জীবনের একটা খারাপ সময় অনেক কিছু বোঝানোর অনেক কিছু শেখানোর সময়।এই শিখন গুলো যখন মানুষের ভালোবাসা, নৈঃশব্দ প্রেম, নিষাদ জীবন সবকিছু ছাড়িয়ে কেবল তোমাকে তোমার কুয়াশার অন্ধকার চিনিয়ে দিতে পারে।
দু-একটা ঘটনা হয়তো তোমার মনে থাকতে পারে। আবার অনেক বেলা মনে নাও থাকতে পারে কিন্তু তবুও এইগুলো কুয়াশা।দূরের কুয়াশার চোখে দেখতে পাওয়া অনুভব।ঘন একটা সাদা চাদর ঢেকে রেখেছে সামনেটা ফাঁকা অংশকে।সঙ্গে কেউ নেই কিন্তু দূরের কুয়াশা তোমাকে যেমন আগলে রাখে সবকিছু থেকে।তেমনি কালবেলা আগলে রেখেছে সব।বুঝতে না পারার কারণ তার ঘনত্ব কম তোমার চোখের সামনের দৃষ্টি পাতলা।
অন্ধকারে যখন কেও হারিয়ে যায় তখন আমাদেরকে কেউ না কেউ বের করে আনার চেষ্টা করে।প্রতিটা মানুষ যখন নিজেদেরকে নিজের মতো করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সেই সময় হয় তাকে কোন আকাঙ্ক্ষা বা কোন ইচ্ছা বা কোনো ভালোবাসা তাকে আটকে দেয়।
প্রেম-ভালোবাসা সবই একটা কুয়াশার মতো।সামনের কুয়াশা দূরের কুয়াশার মতো অনেকগুলো ভালোবাসা প্রেম।
জীবন যদি নদী হয়ে বড় পাহাড় থেকে আস্তে আস্তে মোহনার দিকে ছুটে যায়।হয়তো অনেকগুলো অন্ধকারের পথ পেরোতে হয়।সেই পথগুলো অনেক অনেক নদীর গতিপথ।আশা হারিয়ে যায় কুয়াশাগুলো গাঢ় হলে।
প্রতিঘর মানুষের একটা জীবনের গল্প বলে।নির্দিষ্ট কোন গল্প নয়।অনেকগুলো কুয়াশার কথা।কিছু কিছু মানুষ এগিয়ে চলে কিছু কিছু মানুষ যে কুয়াশায় আটকে যায়।অন্ধকার পেরোতে গেলে একটা জীবন পেতে গেলে,অনেক বেশি এগিয়ে যেতে হয়।নিজের মনের মত একটা শরীরের পাওয়া যায় না হয়তো।কিন্তু কুয়াশা পাওয়া যায়।মনের চোরাবালির মতো একটা স্রোত আমাদের নিজেদের জীবনের অনেকগুলো জীবন তৈরি করে।
অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আসে সন্ধ্যা কাল।কুয়াশার পথ।কুয়াশাময় জীবন।
কুয়াশার একসময় অপমৃত্যু ঘটে।আমরা অপমৃত্যু কে আত্মহত্যা বলি।মৃত্যু জীবনের কুয়াশার মতো।দূরের কুয়াশাকে দেখতে পাওয়া যায় আর কাছের কুয়াশাকে করা যায় অনুভব।চশমার কাঁচে কুয়াশা কি দেখতে পাওয়া যায়?
কাছের দৃষ্টি ঝাপসা চাদরের মতো যা ভোরের আকাশে সূর্যের আলোতে আস্তে আস্তে মিশে যায়। শীতেও প্রতি দিন কুয়াশা আসে না।কিছু স্মৃতি কুয়াশাকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
তোমার বাবা-মা,দাদু-ঠাকুমা বা বন্ধু-বান্ধবী,আত্মীয় পরিজন সবাই এক একটা কুয়াশার কণা।হতে পারে তারা যে কোনদিনই মিশে যেতে পারে।তোমার চাওয়া কিমবা না চাওয়ার মধ্যে যে কুয়াশার কোন দায় ভার সবসময় থাকে না।
সাঁঝবেলার কুয়াশা আর কিছু না।কেবলমাত্র একটা নতুন আলো ফুটবার আশা।প্রতিদিন প্রতিটা মানুষের কুয়াশাগুলো তৈরী করতে পারে একটা গ্রাম একটা নগর।
বেশ্যাখানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের কাছে কুয়াশা তার জীবন।সেও কুয়াশার শিকার।অন্ধকারের পাতকুয়াতে টেনে ননিয়ে গিয়েছে নাগরের দল।কুয়াশা ঘেরা অন্ধকার চোরাবালি হতে পারে এক জীবন।
সাঁঝবেলার কুয়াশা কেবল রাত পার হয়ে ভোরের আলো ফুটবার আগের সময়ের আশা।ভালোলাগা তখনই তৈরী হয় যখন পূব আকাশে আলো ফোটে।সাঁঝবেলার কুয়াশাদের কথা মনে থাকে না কারও।কেবল মনে থাকে সকালের কোমল কুয়াশার কথা।
No comments:
Post a Comment