পথ হারানো
রাজার শহরের প্রথম কুয়াশা শৈশব। খোলা উঠোনে আগুন কড়াই। হাত সেঁকা পা সেঁকা শরীর গরম করা চলছে। বহু ব্যবহারে কালো কালো আর ও অন্ধকার ধোঁয়াশা।লকলকে আগুন ধোঁয়া শুধু উঠছেই উপরে আর ও আকাশের অন্যপারে খানিকটা।তাকিয়ে দেখছি সেকি অভাগীর স্বর্গের রথ?না তো! সে সিঁড়ি বেয়ে কুয়াশা নামে টিপ টিপ।ঠাকুমা বলতেন,ওস্ পড়ছে মাথা ঢাক হেনা।টুপ টুপ শীতে গলা বসবে,কাসবি। পড়া বন্ধ। জ্বর জ্বর পড়া বন্ধের কুয়াশা হলে বেশ হয়। ঠাকুমার সঙ্গে রাত দিন জেগে গল্প আর শীত রাত্রির হিমের ধুম। বেশ ভালো থাকার গল্প। কুয়াশা নামে ঘুমের ভিতর। বেড়ে উঠে সে কোন শহরের কুয়াশা ছোঁয়।অন্য সে শহরে হিম দেখবে কি, ঘরের দালানের ভিতর সীমাহীন নরম সাঁঝ শীতের ধোঁয়াশা না অন্ধকার ধুলোর শয্যা। পরিবেশের ধোঁয়ার অন্ধকার ধুলোর কালিমা!.....আবার ফিরতে হল টিপ টিপ পায়ে তিস্তার পাড় ধরে তোর্সার চরে আর ও একবার। সেখানে চর জুড়ে সাদাটে ভেজা গন্ধ। কুয়াশার ও যে আলাদা গন্ধ আছে রাজশহরে আবার ফিরে এসে জানা হল বুঝি।নিজের ভাবনা ভাবিনি কখনো।রাজ শহরে পা দিয়েই ভাবতে হচ্ছে।আর রাত ন'টায় ছুটতে হচ্ছে রুটির তাগিদে কিংবা বাজার উদ্দেশ্যে।সেখানে ধোঁয়া ধোঁয়া আখায় জ্বলন্ত আগুন।সে আগুন ঘেরা মুখের পাশে দাঁড়ালে কেমন শুদ্ধিবোধ হয়।চারটে রুটির প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পর ও সন্তর্পণে পা ফেলি।ভাললাগার হিম ঘিরে ধরেছে আশপাশ।ঠেসে ধরেছে সব।চারদিকে দেখা যায়না কিছুই।
সাগর দিঘীর চারধারে চ ওড়া রাস্তা তখন ধূসরিত হিমে।মাথায় চাদর দেওয়ার জনৎ হাত বাড়ানোর বা খুলে বের করা সম্ভব ইনা। একহাতে রুটির থলে,অন্য হাতে ব্যাগ।। ব্যাস।এবার যাব কোথায় বল।ব্যাঙ্কের হ্যালোজেন আলোও ধোঁয়ার মত।দূর থেকে গাড়ী ছুটে আসছে।বোঝা যাচ্ছে কেবল দূরের আবছা আলো এলে। বড় অদ্ভুত মায়াময় আবার ভৌতিক অনুভূতিও বটে। এবার ডানদিকে ঘুরে যাব কোথায়!পথ তো হারিয়ে ফেলেছি।রাস্তা দেখা না গেলে হাঁটব কি করে!কান্না এসে বুজে দিচ্ছে গলা।নিজের ওপর রাগ হয়।কেমন একা করে দিল আমাকে কুয়াশার রাজা,যাকে এখন ও ভালবেসে বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকি বেড়াল ছানা যেন,সে প্রেমিকের জন্য ই স্বেচ্ছা নির্বাসন।এ দুর্ভেদ্য,দুরলঙ্ঘ অন্ধকার ধোঁয়াশায় হাঁটব যে সে শক্তি কোথায় পাওয়া যাবে।কোথায় কার কাছে শুনেছিল ইষ্টদেবতার নাম নিলে অনায়াসে বাঁচার পথ পাওয়া যা য়।মনে মনে বাবার নাম নিলাম।মুখের হাসিমাখা ছবি বুকে এঁকে কিছুটা আমতলামুখী হতে না হতেই ফুটে উঠল দূরে আলোর মত কিছু।ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে সে আলো।সাহায্যের মত,বন্ধুর মত,দুহাত বাড়ানো সহযোগীর মত।সত্যি,সে,ঐ তো শুভ না....আমার দিদির ছেলে।এই তো ঈশ্বর বিশ্বাস শুরু হল আমার।ও এবাল কাছে এসে ওর টর্চখানা বাড়িয়ে ধরতেই প্রাণে জল এল। এ ধোঁয়াশা কি আমি চেয়েছি! ঘরে বসে জানলার কাচের একটুকু ফাঁক দিয়ে সে কুয়াশার আস্তরণ দেখতে ভাল লাগে যে।নিজে মধ্যপথে থাকলে একটুওনা।
এ অভিজ্ঞতা নিজেই নিজের অভিভাবক হয়ে বুঝেছি।বার বার। গভীর শীত জাঁকিয়ে এলে উত্তরে তাই আর ভরসা পাইনা পথে বেরোনোর। তবে ছুঁয়ে থাকতে ভাল লাগে ছায়ার মত,আদরের মত,প্রেমিকের মত যে ইচ্ছে করে হারিয়ে গেছে তাকে ধরতে ইচ্ছে হয়।যেমন বেড়ালছানা শিয়রে নেওয়ার মত সে তুলে নিত ঠিক তেমনি কুয়াশার গন্ধে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে আজ ও।বুকের ভিতর শিশুটা যে অমৃত লাভ করেছে মরবে না কোনদিন।হাজার কুয়াশায় পথ হারালেও।
No comments:
Post a Comment