Sunday, December 15, 2019

গদ্য- পম্পা দেব






তবু রহস্য, চির রহস্য

শহরের মধ্যে যেমন শহর থাকে , গ্রামের ভেতর গ্রাম। স্মৃতির ভেতর তেমন থাকে স্মৃতি, বিষাদের মধ্যে বিষাদ ,  কুয়াশার ভেতর কুয়াশার বুক চিরে চিররহস্য আনাগোনা  । সে একটা সময়  , একটা অ্যালবামের মতো। যেন কবেকার এক হলুদ ভ্রমণ কাহিনী । তাতে একটা আস্ত রেলস্টেশন আছে। মাঙ্কি ক্যাপ, চায়ের ফ্লাক্স , হোমিওপ্যিথির ওষুধ আছে। অপেক্ষা আছে। পাহাড় চূড়ার পাকদণ্ডী, পাইনের সিম্ফনি , মোনাস্ট্রির ঘন্টা বেজে ওঠা আছে। অথবা গভীর জঙ্গলে চিতার ক্ষিপ্র দৃষ্টি , সার্চ লাইট আছে। পাতার মর্মর , খাদের ধারে ধোঁয়া ওঠা অন্ধকার আছে। স্মৃতি অনেকটা কুয়াশাচ্ছন্নতা , যেন রোয়া ওঠা সোয়েটার । যার গায়ে লেপ্টে থাকে কবেকার উল আর কাটার সহাবস্থান । চুড়ির রিনরিন শব্দ । কে কবে এক মনে 'দূরে কোথাও, দূরে দূরে,  আমার মন বেড়ায়গো ঘুরে ঘুরে ' সুরে ডুবে যেতে যেতে দুটি কাটার মধ্যে ভালবাসার উলের নকশা বুনে দিচ্ছিল ।  জড়িয়ে নিচ্ছিল নকশা আঁকা শাল। কোন প্রিয়জন। ঝাপসা ঝাপসা , অস্পষ্ট মুখচ্ছবি,  তার গন্ধসুধা মাখা স্মৃতিময় , ধোঁয়া ওঠা  ভালবাসার সোয়েটার । যা গায়ে জড়ালে ভালবাসা টের পাওয়া যাবে । স্মৃতির ভেতর ঘুমিয়ে থাকে আরশিনগর । স্মৃতির ভেতর ঘুমিয়ে থাকে কবেকার লাইট হাউস, ম্যাজিক ল্যান্টার্ন , যার মায়াবী আলোয় উজ্জ্বল নগরজীবনের গোধূলি বেলার কথা মনে আসে । এক 'গন্ধপুরাণ '। তার ডালা খুললেই হাজার হাজার প্রজাপতি উড়ে যায়। একটা রঙের ভেতর আরেকটা রঙ , একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষ , একটা গানের ভেতর আরও গান , একটা ছবির ভেতর অনেক ছবি মিশে যায়। সেই যে একটা সোয়েটারের একটা সুতো ধরে টানলে ক্রমশ খুলে আসে পরতের পর পরত। আর একেকটা পরতে লেগে থাকে একেকটা সময় , একেকটা মানুষ , একেকটা সম্ভাবনার কথা । কবেকার ছোঁয়া লাগা হারমোনিয়াম, নাচের মুদ্রা, রান্না ঘরের উনুন থেকে উঠে আসা গনগনে আঁচ , টিউবওয়েলে জল তোলার শব্দ, ছাদের দড়িতে ভিজে জামাকাপড় , চায়ের জল চাপানো বিকেল , রেডিও স্টেশনে ট্রেন এসে থামে । তার কাজ গানের একেকটা গল্প রেখে যাওয়া । সেই সব গানের মধ্যে স্মৃতি জাগিয়ে তোলা। আস্কারা মাখা কুয়াসা দিনের মতো। আয়নার গায়ে লেগে থাকা টিপ।  হলুদ অ্যালবামে পুরনো দিনের ছুটিতে কারা বেড়াতে গেছিল নৈনিতাল , কক্সবাজার, মধুপুর বা পালামৌয়ের জঙ্গলে আর হারিয়ে ফেলেছিল ঘরে ফেরার মন। একপাটি চটি আর একখানি চিঠি আজীবন সে খুঁজে পেলনা , আর সেই খোঁজার আনন্দে মশগুল হয়ে থাকল আস্ত আস্ত সময়। স্মৃতিকে খুঁজে বের করতে হবে যে। খালি  চোখে দেখা যায়না সেসব অলৌকিক রহস্য, 'মধুমতী ' বা 'মমতা'' সিনেমার গানের সুর, বহুদূর থেকে ভেসে আসা জ্যোৎস্নাবীথি, যেন অনেক জন্ম পার হয়ে ভেসে আসছে কী এক অনুপম মায়া ঘোর।  দূরের সাইকেলে চেপে হাওয়া মোরগের ইশারাতে আজীবন একেকজন  বিনয় , বিভূতিভূষণ, ভাস্কর কিম্বা নীললোহিত কেবলই ভেসে ভেসে গিয়েছেন আলাস্কা , পার্তাপ্লোতা ,  ম্যাকলাক্সিগঞ্জ  অথবা রোডোডেন্ড্রনের অলিতে গলিতে, আর খুঁজে গিয়েছেন জন্ম জন্মের আলতামিরার গুহালিপি, নীল রঙের চিঠি, কিলিম্যাঞ্জেরোর রহস্য, দূরের মাঝি-মল্লার সন্ধ্যা সঙ্গীত । এইসব আসলে স্মৃতির শহরে দোদুল্যমান পেন্ডুলাম । স্মৃতি আসলে ওই ডোরাকাটা সুটকেস, ট্রেনের হুইসেল, ক্যামেরার  সাদাকালো রিল, হলুদ শাড়ি , কুরুশের কাটা , আর কুয়োতলার শিরীষ গাছ , যার মধ্যে রয়েছে একটি কুয়াশা মাখা আস্ত সময় , যার এক পৃষ্ঠায় মুদ্রিত  বিষাদ ; অপর পৃষ্ঠায় মথিত  আনন্দ । কবেকার আলো-অন্ধকারের বুক চিরে ভেসে আসা একটি ট্রামের ঘন্টি, জীবন-মৃত্যুর বেপরোয়া প্রেমিক-জন্ম অতিক্রম করে যাচ্ছে কুয়াশাঢাকা কোনো নিষেধরেখা , বুকের ভেতর  লিখে নিচ্ছে অপূর্ব এক চিরবালক মন,যার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে অনন্তের পাকদণ্ডী রাস্তা । এই সবকিছু যেন বহুদিন ধরে চলেছে , যেন এক ফুরোতে না চাওয়া ইচ্ছেকুসুম... beyond greyer edge  to explore an another world, to allow one's self to cross the countryside, to live for the truth, neither it surrenders nor it escapes, it is something ,seems like the Lethe world, one's mind stucked with the flawless emotions , endlessly moving forward..lusts for eternity,  goes far and near..here oh here.

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না  যে পিতা সন্তানের লাশ সনাক্ত করতে ভয় পায় আমি তাকে ঘৃণা করি- যে ভাই এখনও নির্লজ্জ স্বাভাবিক হ...

পাঠক-প্রিয়